সুন্দর ও ঝলমলে চুল পাউয়ার জন্যে আমরা কতো কিছু না করে থাকি। চুলের যত্ন নিতে প্যাক, তেল, কন্ডিশনার, শ্যাম্পু সব ব্যবহার করি! একটু সময় পেলেই চুলে অয়েল ম্যাসাজ করি, চুলের কন্ডিশন আর চাহিদা বুঝে ঠিকঠাক যত্ন নিলে হেলদি হেয়ার পাওয়াটা কিন্তু সম্ভব,, মেজর নিউট্রিয়েন্টগুলো আপনার চুল পর্যাপ্ত পরিমাণে পাচ্ছে তো? সুস্থ ও সুন্দর চুলের জন্য মেইন দুইটি ফ্যাক্টর হচ্ছে ময়েশ্চার ও প্রোটিন। চুলে প্রোটিন ও ময়েশ্চারের ঘাটতি আছে কিনা সেটা বাড়িতে বসে কীভাবে বুঝবেন?
চলুন আজকে এই বিষয়ে কিছু তথ্য জেনে নেই।
আমাদের চুল তৈরি হয় কেরাটিন আর অ্যামাইনো অ্যাসিড দিয়ে – এগুলি প্রোটিন। অতিরিক্ত কেমিকাল, দূষণের প্রভাব, গরম বা রোদ্দুরে দীর্ঘক্ষণ থাকার ফলে প্রোটিন ভেঙে যায়। তখনই গোড়া থেকে দুর্বল হয়ে যায় চুল, তা হারায় উজ্জ্বলতা, ঝরে পড়তে থাকে।
মাথায় চিরুনি করলেই গোছা চুল পড়তে থাকে। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে খাবারে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব। খাদ্যতালিকা যেন সুষম হয়, তা দেখতে হবে। রোজ ডাল খান, মাঝে মাঝে দই বা ছানা, অথবা এক-আধটা ডিম খেতে হবে। পাতে রাখুন সবুজ শাক সব্জি,, ফল, বাদাম আর মাছ খেতে পারলেও খুব ভালো থাকবে আপনার চুল। সেই সঙ্গে প্রচুর জল খেতে ভুলবেন না যেন!
প্রোটিন – ময়েশ্চার
আমাদের চুল প্রোটিন দিয়েই তৈরি, যেটাকে বলা হয় কেরাটিন প্রোটিন। চুলের প্রতিটি স্ট্র্যান্ড ডাইসালফাইড বন্ডের মাধ্যমে একত্রিত থাকে। প্রোটিন এই বন্ধনগুলিকে ধরে রাখে এবং শক্তিশালী করে। এটাকে চুলের বিল্ডিং ব্লক বলা যেতে পারে। অপরদিকে, ময়েশ্চার আপনার চুলের ওভারঅল অ্যাপেয়ারেন্সে ভূমিকা রাখে। চুলের আর্দ্রতা ঠিকঠাক থাকলে চুল কোমল বা মোলায়েম লাগে।
১) ভেজা বা শুকনো অবস্থায় চুলের স্ট্র্যান্ড ধরে টানা হলে সেটা প্রসারিত না হয়ে আপনার চুল যদি সহজেই ভেঙে যায়, তবে আপনার চুলে প্রোটিনের অভাব রয়েছে। পর্যাপ্ত প্রোটিনের অভাবে চুল দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়।
২) যদি আপনার চুল একদম শুষ্ক মনে হয়, রুক্ষ এবং খসখসে দেখায়; তাহলে এতে আর্দ্রতার অভাব আছে।
৩) চুলের শাইনিভাব নষ্ট হয়ে যাওয়া, আগা ফাটা এগুলো দেখেও বোঝা যায় যে চুলে ময়েশ্চারের অভাব।
চুলে প্রোটিনের ঘাটতি কেন হয়?
রেগুলার ডায়েটে পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষ জাতীয় খাবার না থাকলে অর্থাৎ পুষ্টিকর খাবারের অভাবে চুলে প্রোটিনের ঘাটতি তৈরি হয়। চুল যদি শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাড় করতে না পারে, তাহলে চুল পড়বেই।।বাইরে থেকে চুলের যে অংশটা দেখা যায় সেটা হচ্ছে মৃত কোষ, সেইজন্যই আমরা চুল কাটলে ব্যথা পাই না। শরীরের সব চাহিদা মিটিয়ে নিউট্রিয়েন্ট এই কোষগুলোতে পৌঁছে।
কীভাবে চুলে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করা যায়?
রেগুলার ডায়েটে আমিষ জাতীয় খাবার রাখতে হবে, যেমন দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, চিজ, ডাল ইত্যাদি। প্রোটিনের অভাব থেকে যে হেয়ার ড্যামেজ হয়, ঘরোয়াভাবে সেটা সারিয়ে তোলা কিছুটা সময় সাপেক্ষ।
কিছু প্রোটিন হেয়ার মাস্ক আছে যেগুলো আপনাকে ব্যাবহার করতে হবে –
ডিমের মাস্ক
ডিমের কুসুম, লেবু, অলিভ অয়েল ও টকদই একসাথে মিক্স করে প্রোটিন প্যাক বানিয়ে নিন। এবার সমস্ত চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে নিন। এরপর ডীপ কন্ডিশনিং হেয়ার কন্ডিশনার লাগিয়ে ৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
অয়েল ট্রিটমেন্ট
পিওর কোকোনাট অয়েলের হিলিং প্রোপার্টি আছে। এটি চুলের প্রোটিন লস রিপেয়ার করতে খুব ভালো কাজ করে। এতে আছে লরিক এসিড যা আপনার চুলের প্রোটিন গঠন পুনরুদ্ধার এবং শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
নারকেল তেলের সাথে আমন্ড অয়েল মিক্স করে স্ক্যাল্পে ও চুলে আলতোভাবে ম্যাসাজ করে নিন। চুলে তেল দিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
চুলের ময়েশ্চার লেভেল কমে যাওয়ার কারণ কী?
দীর্ঘ সময় ধরে প্রখর রোদে থাকা
আবহাওয়ার পরিবর্তন
ঠিকঠাক প্রোডাক্ট দিয়ে চুলের যত্ন না নেওয়া ইত্যাদি
কীভাবে চুলের ময়েশ্চার লেভেল ব্যালেন্স করা যায়?
১) চুলে হিট লাগানোর আগে মানে হিট স্টাইলিং করার আগে প্রোটেকশন নিতে হবে। হেয়ার সিরাম, হিট প্রোটেক্টর স্প্রে এগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
২) চুল ওভার ওয়াশ করা যাবে না, এতে চুলের প্রয়োজনীয় ন্যাচারাল অয়েলও রিমুভ হয়ে যায়।
৩) নারকেল তেলের সাথে কয়েক ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল মিক্স করে সপ্তাহে ২/৩ দিন চুলে অ্যাপ্লাই করুন। এতে খুব দ্রুত চুলের ফ্রিজিনেসের সমস্যা দূর হবে। ক্যারিয়ার অয়েল হিসাবে অ্যাভোকাডো অয়েলও ইউজ করতে পারেন।
৪) কন্ডিশনার স্কিপ করা যাবে না। শ্যাম্পুর পর চুলের গোড়া বাদ দিয়ে পুরো চুলে কন্ডিশনার লাগিয়ে ৫ মিনিট রেখে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
৫) কলা, মধু ও টকদই মিক্স করে হেয়ার নারিশিং প্যাক বানিয়ে সপ্তাহে ১ দিন চুলে লাগাতে পারেন। এতে চুল সফট, শাইনি ও ময়েশ্চারাইজড হবে।
চুলে প্রোটিন ও ময়েশ্চারের ঘাটতি থাকলে সেটা বোঝার উপায় এবং কীভাবে ড্যামেজ চুলের যত্ন নিতে হবে, আজ এই ব্যাপারে আমরা অনেক কিছুই জানলাম। আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য হেল্পফুল ছিল।
মাথায় রাখবেন –
* সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে প্রোটিন হেয়ার ট্রিটমেন্টই যথেষ্ট নয়, তার সঙ্গে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস রপ্ত করুন।
* যথেষ্ট পরিমাণে জল পান করুন।
* চিরুনি, চুলের ব্রাশ, বালিশের কভার, তোয়ালে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
* ভালো মান সম্পন্ন এবং ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
* মাথার ত্বকের ম্যাসাজ করুন, হেয়ার ট্রিটিমেন্টগুলো করুন।
* নিয়মিত চুল পরিষ্কার করুন। ভেজা চুল ক্লিপ দিয়ে আটকে রাখবেন না।
* অতিরিক্ত চুল ঝরে পড়লে বা মাথার ত্বকে অ্যালর্জি হলে (doctor) দেখান।
Tags – Hair Tips Hair Care Protein And Moisture For Hair
মেয়েদের কাছে চুল হলো অমুল্য রত্ন ,, কিনতু আজকাল দূষণের কারনে, শারীরিক প্রবলেমের জন্য সকলের…
এই ভ্যাপসা গরমে ত্বকের উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফিকে পড়ে যায়…. কিনতু সামনেই তো পুজো এখন থেকেই…
ভিটামিন ই ত্বক ও চুলের যত্নে দারুণ কাজে আসে। শরীরের নানা উপকার করে। হাড়ের যত্ন…
Stomach Care : শরীর সুস্থ্য রাখতে চাইলে পেট অবশ্যই পরিষ্কার রাখা খুব প্রয়োজন…. এটি শরীর…
আজকাল বাচ্চা থেকে বয়স্ক সকলেরই ফুসকুড়ির সমস্যা হয়ে থাকে…. গরম থেকে হওয়া ফুসকুড়ি- ব্যথা ও…
এই গরমে রোদে কাজের জন্যে বেরোতেই হয়…. আর এর জন্য মুখ তৈলাক্ত হয়ে যায় ভীষণ…
Leave a Comment