একটা নির্দিষ্ট সময় এর পর সন্তানএর বন্ধু হন – Befriend The Child After A Certain Time
টেনশন অনিশ্চয়তা, বাড়তি কাজের চাপ, অর্থচিন্তা যেভাবে আপনাকে-আমাকে গ্রাস করেছে, ঠিক সেভাবেই তা প্রভাব ফেলছে আপনার পরিবারের তরুণ সদস্যের মনেও। যেহেতু আমাদের বয়স হয়েছে, জীবনে আসা নিত্যদিনের চাপের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেড়েছে।
একটা শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য তারবাবা মায়ের সহযোগিতা অপরিহার্য। তবে এমন অনেক বাবা-মা আছেন যারাশিশুকে একজন আলাদা মানুষ হিসেবে গুরুত্ব দেন এবং বন্ধুর মতো শিশুর কথাগুলো শোনেন ওধৈর্য নিয়ে শিশুর বিষয়গুলো সমাধান করেন।
আগে সন্তানএর বন্ধু হন
শিশুর লালনপালন-বিষয়ক একটিওয়েবসাইট জানিয়েছে, যেযেভাবেই শিশুকে লালন-পালনে বিশ্বাস রাখুক না কেনো শিশুর সঙ্গে বন্ধুত্ব করায়ক্ষতিকর কিছু নেই। বরং শিশুর সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে ভবিষ্যতে জীবনেতার কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
শিশুরাযত না শুনে শেখে তার চেয়ে অনেক বেশি দেখে শেখে। সঙ্গে তারা এটাও লক্ষ করে কোনকাজটা বাবা-মা নিজে করছে না কিন্তু ওকে করতে বলছে।
তাই যদি আমরা বলি, অনেকক্ষণ মোবাইল বাট্যাব নিয়ে খেলা ঠিক না আমাদেরও সেটা থেকে নিজেদের দূরে রাখতে হবে।
স্কুলে-কলেজে বাচ্চারা নিজেদের মতো করে অনেকটা সময় কাটায়। বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলো করে – সে সব এখন বন্ধ। উলটে সারাক্ষণ মা-বাবার খবরদারিতে থাকতে হচ্ছে বলে বিরক্তি বাড়ছে ক্রমশ। তার পর আছে অনলাইন দুনিয়া।
ফেক অ্যাকাউন্ট, সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স, মহিলাদের প্রতি ঘৃণ্য মনোভাব, কাউকে অপছন্দ হলে তাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা – একসঙ্গে অনেকগুলো বিষয় প্রকাশ্যে এনেছে এই ঘটনা। সারা বিশ্ব জুড়ে সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি চিন্তাভাবনা শুরু করেছে কোন ধরনের কনটেন্ট দেখলেই তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত তা নিয়ে।
বাচ্চার সাথে বন্ধুর মত আচরণ করুণ যেনো আপনার বাচ্চা আপনাকে বন্ধু হিসাবে মনের সব কথা বলে।
এক নম্বর, বাচ্চাকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে দেবেন না। অভিভাবক হিসেবে এটা আপনার প্রথম দায়বদ্ধতা। নিরাপত্তাহীনতা থেকেই জন্ম নেয় অবিশ্বাস।
সন্তানএর বন্ধু হওয়া জরুরি
দুই, বাবা-মায়ের সম্পর্ক ভালো না হলে বাচ্চার মানসিক গঠনে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। অনেকেইভাঙতে বসা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখেন স্রেফ বাচ্চার মুখ চেয়ে। সেখানেও যদি নিত্যদিন ঝগড়া, গালিগালাজ, দোষারোপ চলতে থাকে, তা হলেও বাচ্চা সুস্থভাবে বড়ো হবে না।
তিন, নেট আর ফোন ছাড়া আমাদের কারওই চলবে না, একেবারে ঠিক কথা। কিন্তু সেটা যেন আপনাকে পরিবারের মধ্যেই আলাদা একটা দ্বীপের বাসিন্দা না করে দেয়, সেটা দেখতে হবে। কাজের সময়টা আলাদা, তা বাদে ভার্চুয়াল সম্পর্ক বেশি সিরিয়াসলি নেওয়ার দরকার নেই।
চার, হ্যাঁ, এটা ঠিক, যে পৃথিবীতে আগামীদিনে আবার নতুন করে পা রাখবে আমাদের সন্তান, সেখানে সোশাল ডিসট্যান্সিং বা শারীরিক দূরত্ব খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু শারীরিক দূরত্ব বাড়লেও মানসিক গ্যাপ কমিয়ে আনার কথা বোঝাতে হবে।
পাঁচ, রাতারাতি কোনও মানুষ বদলায় না। আপনার সন্তানও বদলাবে না। মা-বাবা বা বাড়ির অন্য যে ক’জনের সঙ্গে বাচ্চার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, তাদের ব্যক্তিত্বের ছাপ পড়বেই তার জীবনে।
প্রতিটা মানুষ একটা নির্দিষ্টলক্ষ্য জীবনে বেছে নেয়। সব কিছুতে তাকে প্রথম না হলেও চলে। বরং সব কিছুতে প্রথমহওয়ার চাপ দেওয়া বা প্রথম না হওয়ার তিরস্কার করা হলে শিশুটি তার স্বাভাবিকপ্রতিভাটাও ঠিক মতো প্রকাশ করতে পারে না। তাই বাবা মায়ের দায়িত্ব হচ্ছে, অন্য দুর্বলতারবিষয়ে শিশুকে সাহায্য করা।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় বিকল্পসিদ্ধান্ত চিন্তা করা এবং দুটো সিদ্ধান্তের মধ্যে ভালো খারাপ বিবেচনা শিক্ষাওসিদ্ধান্ত নেওয়ার অভ্যাস থেকে আসবে। আর এর সবের জন্যই শিশুর মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিপদ দেখলে বড়জোর সন্তানকে সাবধানকরা যাবে, জোরকরলে কোনো পক্ষের জন্যই সেটা ভালো একটা অনুভূতি তৈরি করবে না। উল্টা সন্তানবিদ্রোহী হয়ে উঠতে পারে।
তাই বাবা-মায়ের ইচ্ছা যদি থাকে সন্তানবড় হয়ে প্রকৌশলী হবে আর সন্তানের যদি ইচ্ছা থাকে কবি হওয়ার তবে উভয় পেশার ভবিষ্যৎসম্পর্কেই তাকে ভালোভাবে জানতে সুযোগ দেওয়া উচিত।
যেটা জরুরি তা হল সে কোন পেশাটাবেছে নেবে সেই স্বাধীনতাও তাকেই দিতে হবে। সমাজ যে পেশাকেই যেভাবে দেখুক না কেনোআর যে পেশা থেকে যেরকম অর্থ আসুক না কেনো, দিন শেষে একজন সফল কবি অবশ্যই একজনব্যর্থ প্রকৌশলীর থেকে বেশি কাম্য। তাই সন্তানের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া বেশ জরুরী।
Tags – Life Style