ওপেন পোরস এর কারণ ও তার চিকিৎসা – Causes And Treatment Of Open Pores
সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি সকলেই উজ্জ্বল এবং দাগ-ছোপহীন ত্বক পেতে চান। আর আপনার সুন্দর ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করার জন্য একাই যথেষ্ট কিছু ব্ল্যাকহেডস। নাকের দু’পাশে, কপালে, গালে বা থুতনিতে বেরনো ব্ল্যাকহেডস নিয়ে অধিকাংশেরই দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। নখ দিয়ে চেপে বা স্ট্রিপ লাগিয়ে কয়েকটা ব্ল্যাকহেডস তুলে ফেললে পরের দিন আবার গোটাকয়েক এসে হাজির হয়।
মুখে বড় উন্মুক্ত পোরস (pores): কারণ ও চিকিৎসা
আজকালকার যুগে খুব কম মানুষই রয়েছেন, যাঁরা খুব একটা বাইরে বের হন না। বরং অধিকাংশ মানুষকেই আজকাল নিজের কাজ বা বিভিন্ন কারণে বাইরে বেরোতে হয়। বাইরে বের হলে অতিরিক্ত দূষণের কারণে আমাদের ত্বকে ও মুখে ধুলোবালির আস্তরণ পড়ে। তাই প্রতিবার ভালোভাবে মুখ না ধুলে, তেল-ময়লা জমে রোমকূপ ও ত্বকের ছিদ্রগুলি বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের ত্বকের নীচের থাকা তৈলগ্রন্থি থেকে একধরণের তেল বের হয়।
পোর হল সেই প্রণালীর মুখগুলো যা ত্বকের ভিতরের স্তর থেকে ঘাম ও তেল/সেবাম (sebum) উপরে বয়ে নিয়ে আসে।
● উন্মুক্ত পোর জাতি ও বয়স অনুসারে বিভিন্ন রকম হতে পারে। এটি মহিলা ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে পাওয়া যায়।
● মুখের পোর বয়সের সাথে আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
● প্রাথমিক পর্যায়ে পোর এত ছোট থাকে যা খালি চোখে দেখা যায় না, তবে ত্বকের ক্ষয়, বয়স, হরমোন (hormone), জেনেটিক্স (genetics) ও তৈলগ্রন্থীর কাজের পরিবর্তন অনুযায়ী পরে বড় হয়ে যেতে পারে।
উন্মুক্ত পোর কাকে বলে?
‘উন্মুক্ত পোর’ মানে আসলে হল বিস্ফারিত বা বড় আকারের পোর। ত্বকের এই উন্মুক্ত পোরগুলি সেবাম (sebum-ত্বকের প্রাকৃতিক তেল) ত্বকের উপর বেরোতে দিয়ে ত্বককে ‘শ্বাস’ নিতে সাহায্য করে।
মুখে বেশি পরিমাণে বড় পোর দেখা যায় কারণ মুখে প্রচুর তৈলগ্রন্থী থাকে, বিশেষতঃ ‘টি-জোনে’ (t-zone)। তৈলাক্ত বা মিশ্রিত প্রকৃতির ত্বকে বড় পোর বেশি দেখা যায় (কারণ এখানে সেবাম বেশি তৈরি হয়)। জেনেটিক্স, জাতি, বয়স, লিঙ্গ ও ত্বকের স্বাভাবিক অবস্থা – এগুলির উপরেই পোরের বিন্যাস নির্ভর করে ।
মুখে বড় পোর কেন দেখা যায়?
দেহের ভিতরের ও বাইরের বিভিন্ন কারণে পোরের মাপ ও বিন্যাসে পরিবর্তন আসতে পারে, যেমন:
অতিরিক্ত সেবাম- হেয়ার ফলিকলের (hair follicle) আকার ফাঁপা নলের মত। সেবামের অতিরিক্ত নিঃসরণ ও প্রবাহের ফলে হেয়ার ফলিকলের মুখগুলি চওড়া হয়ে যেতে পারে যার ফলে বড় পোর দেখা যায়।
ওপেন পোরসের সমস্যা দূর হবে ঘরোয়া টোটকায়
জেনেটিক্স ও বংশগত কারণ- জেনেটিক প্রবণতা এবং জাতির উপর নির্ভর করে পোরের মাপের তারতম্য হতে পারে।
বয়স বাড়া ও সূর্যালোকের প্রভাব- বয়স বাড়লে, এবং সূর্যরশ্মি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ত্বকের কোলাজেন (collagen) ও ইলাস্টিন ফাইবার (elastin fibre) পরিবর্তিত হয়ে যায়, যার ফলে ত্বকের প্রসারণশক্তি (tensile strength) ও স্থিতিস্থাপকতা (elasticity) কমে যায়।
হরমোনের তারতম্য- হরমোনের জন্য তৈলগ্রন্থীর কার্যকারিতায় পরিবর্তন হতে পারে, যাতে অতিরিক্ত সেবাম নিঃসরণ হয়ে উন্মুক্ত পোরের জন্ম দিতে পারে।
গুরুতর ত্বকের রোগ বা পুষ্টির অভাব- দীর্ঘস্থায়ী রেডিওডার্মাটাইটিস (chronic radiodermatitis) বা ভিটামিন এ-র অভাবে পোরের আকার বেড়ে যেতে পারে।
পোরের ঘনত্ব
কত শতাংশ ত্বক প্রভাবিত হয়েছে
এই মূল্যায়ন করার পর চর্মবিশেষজ্ঞ আপনার ত্বকের সমস্যার বিশদ ব্যাখ্যা করবেন ও মূল কারণটি চিহ্নিত করবেন।
আপনার কি ঝুঁকি আছে?
মুখের বড় পোর ছাড়া যদি আপনি ত্বকের সংক্রমণ বা ব্রণর সমস্যায় ভোগেন, তবে আপনার চর্মবিশেষজ্ঞ দেখানো প্রয়োজন। মনে রাখুন যে:
মুখের বড় পোর বিপদজনক নয়, এতে কোন দাগ হয়না এবং এর সাথে অন্য কোন ত্বকের রোগের সম্পর্ক নেই। এগুলির আলাদা করে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।
পোরের আকার, বিন্যাস বা ঘনত্বে কোন আকস্মিক পরিবর্তন হলে একজন চর্মবিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
বিস্ফারিত ও উন্মুক্ত পোরের চিকিৎসা
অনেকগুলি কারণ থাকার ফলে মুখের বড় পোরের চিকিৎসা একটু সমস্যাজনক হয়। চিকিৎসা করে আমরা আনুষঙ্গিক সমস্যাগুলিকে দূর করার চেষ্টা করি যেমন অতিরিক্ত সেবাম নিঃসরণ এবং ত্বকের বয়স বাড়া।
সাধারণতঃ চর্মবিশেষজ্ঞরা লাগানোর, খাওয়ার ওষুধ এবং চিকিৎসা প্রক্রিয়া একসাথে যোগ করে উন্মুক্ত পোরের চিকিৎসা করেন।
টপিকাল (topical) লাগানোর ওষুধ- এগুলি হল লাগানোর ওষুধ যেমন ট্রেটিনয়েন (tretnoin), নিকোটিনামাইড (nicotinamide), ভিটামিন সি বা এএইচএ (AHA)।
খাওয়ার ওষুধ- আপনার চর্মবিশেষজ্ঞ আপনাকে রোগের মূল কারণের উপর নির্ভর করে কিছু খাওয়ার ওষুধের নির্দেশ দিতে পারেন, যেমন মুখে খাওয়ার রেটিনয়েড (retinoid) আইসোট্রেটিনয়েন (isotretinoin), অ্যান্টিঅ্যান্ড্রোজেন স্পাইরোনোল্যাকটন (spironolactone) এবং গর্ভনিরোধক বড়ি (oral contraceptive pill)।
মুখের ত্বকে বড় পোর হওয়া কিভাবে প্রতিরোধ করা যেতে পারে?
একটি নিয়মিত ত্বকের যত্নের রুটিন (routine) মেনে চললে মুখের পোরের আকার কমানো সম্ভব। আপনার ত্বকপরিচর্যার এই ধাপগুলি থাকা প্রয়োজন:
পরিষ্কার করা- একটি হালকা নন-কমেডোজেনিক (non-comedogenic) ক্লিনজার দিয়ে দিনে দুবার মুখ ধুয়ে পোরের মুখগুলি পরিষ্কার রাখুন।
নিরাপদ রাখা- একটি ব্রড-স্পেকট্রাম
(broad-spectrum), জলরোধক (water-resistant), ৩০ বা তার বেশি এসপিএফ (SPF) যুক্ত সানস্ক্রিন প্রত্যেক দিন ব্যবহার করুন যাতে সূর্যালোকের প্রভাব থেকে বাঁচা যায়।
পুষ্টি দেওয়া- তৈলাক্ত ত্বকের উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার (moisturiser) ব্যবহার করুন। কোলাজেন বাড়ানোর প্রোডাক্ট (product) ব্যবহার করুন।
লেবুর ব্যবহার
লেবুতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড যা ত্বকের শুষ্কতা দূর করে ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকলে, ব্ল্যাকহেডসের সমস্যা আপনার কাছে ঘেঁষতে পারবে না। (৩) আর ভিটামিন-সি কোলাজেন সংশ্লেষণ বৃদ্ধি করে ক্ষতিগ্রস্থ ত্বককে মেরামত করে এবং ত্বককে করে তোলে আর্দ্র, কোমল ও টানটান। ত্বকের বলিরেখা ও কুঁচকানো ভাব কমায় এবং আপনার সার্বিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
মুলতানি মাটির ব্যবহার
মুলতানি মাটি প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বকে জমে থাকা ধুলো-ময়লা, মৃত কোষ, ব্ল্যাকহেডস দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব কমিয়ে ব্রণ বা ব্ল্যাকহেডসের মতো সমস্যাও দূর করে।
Tags – Causes And Treatment Of Open Pores Life Style Skin Care Skin Tips