গর্ভাবস্থায় কোন কোন মাছ খাওয়া উচিৎ – Some Fish Should Be Eaten During Pregnancy
আপনি হয়ত গর্ভাবস্থায় মাছ খাওয়া সম্পর্কে পরস্পর বিরোধী মতামতের কিছু প্রতিবেদন পড়ে থাকতে পারেন,যা গর্ভাবস্থায় মাছ খাওয়া নিরাপদ কি অনিরাপদ সে ব্যাপারে বিভ্রান্তি তৈরী করে। তবে মাছের প্রচুর ভাল দিকও রয়েছে ।
আপনার শিশুর প্রাথমিক বিকাশগুলির জন্য প্রয়োজন ব্যাপক বিন্যাসে অপরিহার্য পুষ্টিগুলি আর মাছ সেগুলির মধ্যে অনেক পুষ্টিই প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ করে থাকে।মাছের মধ্যে কম মাত্রায় সম্পৃক্ত ফ্যাট থাকে তবে এর মধ্যস্থ উচ্চ মাত্রার পুষ্টিকর উপাদানগুলি ক্রমবিকশিত শিশুর জন্য খুবই প্রয়জন,যেমন ভিটামিন D এবং প্রোটিন,আর এগুলি একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থাকে পরিচালিত করতে সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় মাছ খাওয়া-নিরাপদ নাকি অনিরাপদ
মাছ খাওয়া শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো। মাছে বর্তমান ওমেগা ৩ ও ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখে, রক্তচাপকেও বাড়তে দেয় না এছাড়া আমাদের স্নায়ু ও মস্তিস্ককে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।
প্রোটিন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ও প্রোটিন জাতীয় খাবার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রোটিন গর্ভবতী মহিলাদের বিভিন্ন শারীরিক প্রক্রিয়াগুলিকে স্বাভাবিক রাখে। এছাড়া এর ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। আর এই প্রোটিন মাছ থেকে পায়।
ভিটামিন
মাছে বর্তমান ভিটামিন ডি, ভিটামিন এ ও ভিটামিন ই বর্তমান। এর ফলে গর্ভস্থ শিশুর হাড়ের গঠন ভালোভাবে হয়। হাড়ের ঘনত্ব স্বাভাবিক থাকে। এছাড়া এই সময় গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে নানা ধরণের পরিবর্তন হয়। শরীরে গঠন পরিবর্তিত হয়। হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। ভিটামিন ডি তাই এই সময় অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া ভিটামিন ই গর্ভবতী নারী ও শিশুটির ত্বকের জন্য এবং চুলের জন্য ভালো।
গর্ভবতী মহিলাদের মাছ খাওয়া কেন উচিত
রক্তচাপ
গর্ভবতী অবস্থায় আমাদের রক্তের চাপ কখনো বেড়ে যায় আবার কখনো কমে যেতে দেখা যায়। এর ফলে শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পরে। যা গর্ভস্থ শিশুটির বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু মাছে বর্তমান ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তে ট্রাইগ্লিসারিনকে বাড়তে দেয় না, এবং রক্ত চাপ স্বাভাবিক রাখে। এছাড়া ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদযন্ত্রকেও ভালো রাখে।
শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশ
মাছে বর্তমান ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড গর্ভস্ত শিশুর মস্তিস্ক ও স্নায়তন্ত্রের পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়তা করে। এছাড়া কিছু কিছু মাছে DHA থাকে। এটি গর্ভস্থ শিশুর সমগ্র বিকাশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বর্তমান গবেষণা বলছে যেসমস্ত গর্ভবতী মহিলারা মাছ খান তাদের শিশুদের মস্তিষ্ককের বিকাশ যারা মাছ খান না তাদের শিশুদের তুলনায় বেশি হয়।
মাছ হল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির আড়ত,যেগুলি একজন গর্ভবতী মহিলার একটি স্বাস্থ্যকর ভ্রূণের প্রতিপালনের জন্য প্রয়োজন।তবে জলাশয়গুলি থেকে অনেক ধরণের বিষাক্ত এবং দূষিত পদার্থগুলি মাছের দেহে প্রবেশ করে এবং সেই মাছগুলিকেই আবার যখন আমরা খাই তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আমাদের দেহেও প্রবেশ করার মাধ্যমে মানব স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
গর্ভবতী থাকাকালীন কতটা মাছ আপনার খাওয়া উচিত?
তাহলে,গর্ভাবস্থায় আপনার কি পরিমাণ মাছ খাওয়া উচিত?FDA(ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) এবং EPA(এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি)-এর মত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি দুই থেকে তিনটি পরিবেশনের সুপারিশ করে থাকে,যার অর্থ হল 8-12 আউন্স(226-340 গ্রাম)কম মার্কারিযুক্ত মাছ প্রতি সপ্তাহে।স্তনদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রেও এই একই নির্দেশাবলী অনুসরণ করা উচিত ।
মাছ হল চর্বিহীন প্রোটিনের শক্তিশালী উৎস,এর মধ্যস্থ অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড ভ্রূণের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।এটি শিশুর চুল,হাড়,ত্বক এবং মাংসপেশীর জন্য কোষগুলি গঠণ করতে সহায়তা করে।
স্যালমন জাতীয় মাছ আবার DHA এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের দুর্দান্ত উৎস,যা শিশুর মস্তিষ্কের বৃদ্ধি এবং ক্রিয়াকলাপে সহায়তা করে। হবু মা যদি হাইপার টেনশনে ভুগে থাকেন,সেক্ষেত্রে মাছ খেলে তা আবার তাদের রক্তচাপ হ্রাস করার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।মাছ সমন্বিত একটি সমৃদ্ধ খাদ্য তালিকা আবার রক্ত জমে যাওয়া এবং রক্তে ফ্যাটের মাত্রাও হ্রাস করতে সহায়তা করে থাকে,যা গর্ভবতী মহিলাদের কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে।
গর্ভবস্থায় আপনি যে সকল মাছগুলি খেতে পারেন
গর্ভাবস্থায় যখনই কোনও রেঁস্তোরায় খেতে যাবেন বা বাড়িতে রান্না করবেন,গর্ভাবস্থার জন্য নিরাপদ মাছের তালিকাগুলি আপনার মাথায় রাখা উচিত।আপনি স্যালমন, শ্রিম্প(বাগদা চিংড়ি),শিঙি,মাগুর জাতীয় মাছ,কাঁকড়া,কড মাছ,গলদা চিংড়ি,ঝিনুক এবং ট্রাউট গুলিকে গর্ভাবস্থায় সেবনের জন্য বেছে নিতে পারেন।
মাছ খেলে কি কি ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে
কিছু মাছ আছে যেগুলিতে মারকিউরি অত্যন্ত বেশি মাত্রায় থাকে। এই মারকিউরি বেশি মাত্রায় গর্ভবতী মহিলার শরীরে গেলে তা গর্ভস্থ শিশুটির মস্তিস্ক বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এবং শিশুটি জন্মাবার পর স্বাভাবিক নাও হতে পারে। এছাড়া মারকিউরি গর্ভস্থ শিশুর আরো নানা রকম ক্ষতি করে যেমন ফুসফুস, কিডনি, স্নায়ু ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্থ হয় এছাড়া দৃষ্টি শক্তি ও শ্রবণশক্তিও দুর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
গর্ভাবস্থায় সাধারণত যে কোনো মহিলাকেই বিশেষত সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। কারণ শিশুটির সুস্থতা ও সম্পূর্ণ বিকাশ মায়ের ওপরেই নির্ভর করে। এমত অবস্থায় খাওয়া দাওয়ার বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই বিশেষ করে অতিরিক্ত মারকিউরি জাতীয় মাছ খাওয়া উচিত নয়। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন মাছ খাওয়া এবং যে সব মাছে মারকিউরির পরিমান কম থাকে সেই সমস্ত মাছ খাওয়া ভালো। দরকার মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
Tags – Some Fish Should Be Eaten During Pregnancy Life Style Health Tips Health Care Food