ঋতুস্রাব হলো প্রত্যেক নারী শরীরের একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এই ভগ্ন ঝিল্লি, সঙ্গের শ্লেষ্মা ও এর রক্ত বাহ থেকে উৎপাদিত রক্তপাত সব মিশে তৈরী তরল এবং তার সংগে এর তঞ্চিত এবং অর্ধ-তঞ্চিত মিশ্রণ কয়েক দিন ধরে লাগাতার যোনিপথে নির্গত হয়। এই ক্ষরণই রজঃস্রাব বা রক্তস্রাব বা ঋতুস্রাব বলে।
প্রতি মাসে এটি হয় বলে এটিকে বাংলায় সচরাচর মাসিক[২] বলেও অভিহিত করা হয়। প্রজননের উদ্দেশ্যে নারীর ডিম্বাশয়ে ডিম্বস্ফোটন হয় এবং তা ফ্যালোপিয়ন টিউব দিয়ে জরায়ুতে চলে আসে এবং ৩-৪ দিন অবস্থান করে।[৩] এ সময় যদি পুরুষের সঙ্গে যৌনমিলনের মাধ্যমে নারীর জরায়ুতে শুক্র না-আসে এবং এই না-আসার কারণে যদি ডিম্ব নিষিক্ত না হয় তবে তা নষ্ট হয়ে যায় ।
সবসময় হাসতে থাকা, খেলতে থাকা মেয়েটাও মাসের কয়েকটা দিন চুপচাপ হয়ে যায়, দুখী হয়ে যায়, আমরা যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখা যাবে এই সময় বাড়ির লোকও কিছু জায়গায় যাওয়া বা কোন কিছু স্পর্শ করতে নিষিদ্ধ করে। আপনারা ঠিকই বুঝেছেন, আমরা পিরিয়ডস অর্থাৎ ঋতুস্রাবের কথা বলছি।
পিরিয়ডস অর্থাৎ ঋতুস্রাব মহিলাদের প্রতি মাসে যোনি থেকে নিঃসৃত লাল স্রাবকে বলা হয়। মহিলাদের ঋতুস্রাব সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান না থাকায় নানান সমস্যায় পড়তে হয়।
এই মাসিক চক্র শরীরের অন্যান্য শারীরিক ক্রিয়ার মতই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর দ্বারাই সংসার চলে। এটি ছাড়া মনুস্যর জন্ম হওয়া সম্ভব নয়। প্রকৃতির দান হিসাবে মহিলাদের গর্ভে ডিম্বাশয় ফেলিওপিয়ান টিউব এবং যোনি রয়েছে যার দ্বারা তারা সন্তান উৎপাদন করতে সক্ষম।
মাসিক চক্র
মাসিক চক্রের সময় শারীরিক পরিবর্তন
হরমোনের পরিবর্তন
মাসিক চক্র শুরু হবার সময় এস্ট্রোজেন নামক হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি হতে থাকে। এই হরমোন শরীরকে সুস্থ রাখে, বিশেষ করে হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি এই হরমোনের ফলে গর্ভশয় অবস্থায় রক্ত এবং কোষের ওপর একটা পর্দা তৈরি করে যাতে ভ্রুনের দ্রুত বিকাশ ঘটে।
ডিম্বস্ফোটন
সন্তানের জন্মের সময়, ডিম্বাশয়গুলির মধ্যে একটি উন্নত ডিম, ডিম্ব থেকে উদ্ভূত হয় এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবগুলিতে পৌঁছে যায়। একে ডিম্বস্ফোটন বলা হয়। সাধারণত মাসিক চক্রের 14 তম দিনে এটি ঘটে। কোন কারণের কিছু আগে পিছে হয়ে যায়। ডিম্বস্ফোটন সময় এস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যায়।
ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার আগের লক্ষণ
ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার প্রথমদিকে মেয়েদের মধ্যে অনিয়মিত পিরিয়ডস, বেশি বা কম দিন পর্যন্ত পিরিয়ডস হওয়া, কম বা বেশি মাত্রায় স্রাব নিঃসরণ ইত্যাদি লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও PMS অর্থাৎ ঋতুস্রাব হবার আগের লক্ষণ দেখা যায়। বিভিন্ন মহিলাদের বিভিন্ন PMS এর লক্ষণ দেখা যায়।
ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার বয়স
সাধারণত ঋতুস্রাব মেয়েদের ১১ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে শুরু হয়ে যায়। কিন্তু যদি এর থেকে কম বা বেশি সময়ে শুরু হয় তাহলে চিন্তার কোন কারণ নেই। ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার মানে মেয়েটি মা হতে পারবে। শুরুর দিকে ঋতুস্রাব এবং ডিমস্ফোটনের সময়ের মধ্যে অন্তর হতে পারে।
পিরিয়ডস শুরু হলে
পিরিয়ডস শুরু হবার দিনটা মনে রাখার চেষ্টা করুন যাতে আপনি আগে থেকে নিজেকে তৈরি রাখতে পারেন। এই সময় নিজেকে কোন ব্যাপারে আটকাবেন না। সাধারণ ভাবেই জীবনযাপন করুন। শুধু সময় পেলে একটু বিশ্রাম করুন।
নারীদের অনিয়মিত রক্তস্রাবের কারণ কী?
এই রোগীরা বেশিরভাগ সময় গাইনি চিকিৎসকের কাছে আসে। বেশিরভাগ বিষয়ই গাইনোকোলজিক্যাল কারণে থাকে। রিপ্রোডাকটিভ (প্রজনন) বয়সের একজন নারী যদি আসেন, তার প্রচলিত কারণ হলো, জরায়ুর টিউমার। তার জরায়ুতে টিউমার হতে পারে। যেমন : ফ্রাইব্রয়েড। যেমন : ক্যানসার ও নন-ক্যানসার। ক্যানসার নয়, এ রকম টিউমারও হয়। যেমন : ফাইব্রয়েড ইউট্রাস। এটি অনেক প্রচলিত। আরেকটি হতে পারে অ্যাডিনোমায়োসিস।
রোগী জটিল রক্তস্বল্পতা নিয়ে আসতে পারে, দুর্বলতা নিয়ে আসতে পারে। সে এসে বলে আমার অনেক রক্ত যায়। অনেকে চাকা চাকা যায়। অনেক ব্যথা হয়। অনেক বেশি হয়, বেশি দিন থাকে। কেউ কেউ দুটো সমস্যা নিয়ে আসতে পারে। এটা প্যালভিক ইনফ্লামেটোরি রোগ। এর মানে জরায়ুর আশপাশে জরায়ুসহ তার একটি প্রদাহযুক্ত অবস্থা হয়। এরপর হতে পারে অ্যান্ড্রোমেট্রোসিস।
ঋতুস্রাবে কতটা রক্ত ঝরে
ব্যথা, রক্তপাত, খিঠখিটে মেজাজ, হরমোনের তারতাম্যজনীত অস্বস্তি ইত্যাদি নানান বাজে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাদের। স্বভাবতই তাদের মনে হতে পারে প্রতিমাসে অনেকটা রক্তক্ষরণ হয়ে যাচ্ছে নিয়মিত, তবে আসলে যতটা মনে হয় ততটা নয়।
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইটের প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে জানানো হল ঋতুস্রাবের মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে ঠিক কতটা রক্তক্ষরণ হয় নারীদের।
স্বাভাবিক রক্তক্ষরণ: পুরো ঋতুস্রাব চলাকালীন স্বাভাবিক রক্তক্ষরণের কারণে হারানো রক্তের পরিমাণ প্রায় ৩০ থেকে ৫০ মি.লি.লিটার, যা প্রায় দুই থেকে তিন টেবিল-চামচ।
এর কারণ হল ঋতুস্রাবের সময় স্ত্রী জননাঙ্গ থেকে নিঃসৃত তরল শুধু রক্ত নয়। এর সঙ্গে থাকে ‘ইউটেরাইন টিস্যু’, ‘এন্ডোমেট্রিয়াল সেলস’, জমাট বাঁধা রক্ত ইত্যাদি যা একত্রিত হয়ে পরিমাণ অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। আর একারণেই মনে হয় প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
হেভি পিরিয়ড: ‘হেভি পিরিয়ড’য়ের ব্যাখ্যা নারীভেদে ভিন্ন। একজনের ভারি ঋতুস্রাব হয়ত আরেকজনের জন্য স্বাভাবিক মাত্রা। ঋতুস্রাবের তরলের মাত্রা ৮০ মি.লি.লিটারের বেশি হলে তাকে ‘হেভি পিরিয়ড’ হিসেবে ধরা হয়। এছাড়াও সাতদিনের বেশি সময় উল্লেখযোগ্য হারে রক্তক্ষরণ অব্যাহত থাকলে তাকেও ‘হেভি পিরিয়ড’ বলা যাবে।
রক্তপাত পোশাক ভেদ করলে, ‘স্যানিটারি প্যাড’ প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর পরিবর্তন করতে হলে, জমাট বাঁধা রক্তের আকার এক ইঞ্চির বড় হলে কিংবা একসঙ্গে দুই ধরনের ‘স্যানিটারি প্যাড’ ব্যবহার করতে বাধ্য হলে সেটাও ‘হেভি পিরিয়ড’ হিসেবে ধরা হয়।
পিরিয়ডের সময় চাকা চাকা রক্তপাত কেন হয় –
ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের ভারসাম্যই ইউটেরাসের ভিতরের লাইনিং বা এন্ডোমেট্রিয়াম গঠন করে। মাসিক ঋতুচক্রের সময়ে এই এন্ডোমেট্রিয়ামটাই নির্গত হয় শরীর থেকে, কিছুদিনের মধ্যে ফের গড়ে ওঠে। হরমোনের স্তরে কোনো গোলমাল হলে এন্ডোমেট্রিয়াম(Endometrium) মোটা হয়ে যায়, ফলে রক্তপাতও বেশি হয়।
* ওভারিতে কোনো সমস্যা থাকে, ইউটেরাসে ফাইব্রয়েড বা পলিপ তৈরি হয় তা হলে অতিরিক্ত রক্তপাত(Bleeding) হতে পারে।
* অনেক সময়ে নন-হরমোনাল ইন্ট্রা ইউটেরাইন ডিভাইস শরীরে প্রবেশ করালে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও হেভি ব্লিডিং হতে পারে।
* প্রেগন্যান্সির(Pregnancy) মধ্যে রক্তপাত হলে বুঝতে হবে যে কোথাও কোনো সমস্যা তৈরি হয়েছে বলেই তেমনটা হচ্ছে।
মেনে চলুন কিছু সাবধানতা:
* অতিরিক্ত রক্তপাত থেকে কিন্তু অ্যানিমিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
* খুব বেশি রক্তক্ষয় হলে ক্লান্তিবোধ থাকবে, নিয়মিত কাজকর্ম করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে বিশ্রাম নিন, জোর করে কাজ করতে যাবেন না। ব্যায়াম(Exercise) করাও বন্ধ রাখুন কয়েকদিন।
* খুব বেশি রক্তপাত হলে কিন্তু আপনার কোষগুলো যথেষ্ট অক্সিজেন(Oxygen) পাবে না, সেক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
Tags – Bleeding In Women period Life Style
Durga Puja Makeup Tips: হাতে গোনা পুজো আর ১৭ দিন,,শহরে আনাচে কানাচে উৎসবের আমেজ তৈরি…
Durga Puja 2024 Date Time: হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে দুর্গাপূজা আশ্বিন মাসে পালন করা হয়। কখনও…
আজকাল কতো কিছু প্রোডাক্ট ইউজ করেও চুল পড়া বন্ধ করা যাচ্ছে না....চুলের সঠিক যত্ন ও…
Healthy Skin Tips For Face: সারা বছর ফেসিয়াল না করলেও পুজোর আগে সকলে আমরা ফেসিয়াল…
আজকাল মেকাপে মেতেছে সারা দুনিয়ার মানুষ,, বাচ্চা থেকে বয়স্ক সকলের মধ্যেই একটি ক্রেজ লক্ষ্য করা…
Bengali Durga Puja saree look: দেখতে দেখতে বছর গড়িয়ে চলে এলো দুর্গাপুজো….. সেপ্টেম্বরের মাঝ থেকেই…
Leave a Comment