শিশুকে পর্যাপ্ত পুষ্টি দিবেন কিভাবে – How To Give Adequate Nutrition To The Child
পরিবারে আনন্দ সুখ অনেক কিছুই আবর্তিত হয় শিশুকে কেন্দ্র করে। শিশুর হাসি যেমন মায়ের যাবতীয় দুঃখ দূর করে দেয়, তেমনি বাবাকে অনুপ্রাণিত করে সংসারযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে। প্রতিটি শিশুই ছোট্ট চারাগাছের মতো। তার মধ্যে রয়েছে বিশাল বৃক্ষ হয়ে বিকশিত হওয়ার যোগ্যতা। এই সময়ে শিশুদের আচার–ব্যবহার যেমন শেখাতে হবে, তেমনি আদর্শ খাবারের দিকে আগ্রহী করে তুলতে হবে।
শিশুর পুষ্টিহীনতা নিয়ে কিছু তথ্য এবং যা করবেন
শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, বুদ্ধির বিকাশ ও সুস্থতার জন্য পুষ্টি শিশু মৃত্যুর প্রায় এক মারাত্মক পুষ্টিহীনতা। পুষ্টিহীন শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে।
তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি
১) শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ঘন ঘন রোগে আক্রান্ত হওয়া।
২) খাবারে অরুচি।
৩) শিশুর অস্বাভাবিক আচরণ।
৪) শিশুর ত্বক ও চুলের স্বাভাবিক রং পরিবর্তন।
৫) অমনোযোগ।
৬) সব সময় শিশুর মধ্যে ক্লান্ত ভাব লক্ষ করা।
জেনে নিন বাচ্চার প্রথম বছরে পুষ্টি উপাদান কি কি দরকার
পুষ্টি হীনতার কারণ
১) শিশুর দীর্ঘ দিন সুষম খাদ্যের অভাব।
২) মা-বাবার পুষ্টি বিষয়ক জ্ঞানের অভাব।
৩) পারিবারের অশিক্ষা ও দারিদ্র্য।
৪) শিশুদের ক্রনিক রোগের কারণে খাবারে অরুচি।
৫) শিশুর দীর্ঘদিন ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হওয়া।
৬) খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব, শিশু পুষ্টিহীনতার অন্যতম কারণ।
সাংসারিক কাজের ফাঁকে কঠিন মনে হতে পারে, বাচ্চাকে প্রচুর সময় দিন। তার সঙ্গে খেলুন। বাচ্চার জন্য অপ্রয়োজনীয় ইলেকট্রিক গ্যাজেট সরিয়ে রাখুন। মোবাইল ফোন, ট্যাব—এগুলো শিশুর জন্য নয়। তাকে হাতে খেলনা দিন, ছবিওয়ালা বই কিনে দিন। বাচ্চার সঙ্গে বসে খেলুন, বই পড়ে শোনান।
দুই বছর বয়স থেকে শিশুদের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে। তখন বাবা-মায়ের দেওয়া সময়, আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা তার ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়ক। সম্ভব হলে অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে তাকে খেলতে দিন। খোলা পার্কে নিয়ে যান, ইচ্ছেমতো ছুটে বেড়াতে দিন। হাতে ধরে প্রকৃতি চেনান।
শিশুর খাবারে খেয়াল রাখুন
ছয় মাস থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত সময়টা শিশুদের জন্য খুবই সংবেদনশীল। এই বয়সে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে অন্যান্য সম্পূরক খাবার দেওয়া হয়। কিন্তু সম্পূরক খাবারে স্বাদের ভিন্নতা না থাকায় একই রকম খাবার খেতে শিশুর অরুচি আসে। শিশুর হজমে সমস্যা হতে পারে, এ জন্য এই বয়সী শিশুদের খাবারে খুব একটা নতুনত্ব আনা যায় না।
এ ছাড়া বাচ্চারা যেহেতু জল তেমন একটা পান করে না, তাই বুকের দুধের পাশাপাশি অর্ধতরল খাবার বেশি খাওয়ানো হয়। এতে শিশুর পেট বেশি সময় ভরা থাকে। সেই সঙ্গে শিশু সব ধরনের পুষ্টি উপাদানও পায়, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোনো শিশু যদি সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ করে এবং মল যদি খুব শক্ত হয়ে মলদ্বারে ব্যথা সৃষ্টি করে, ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়, মাঝেমধ্যে পেটে ব্যথা হয়, পেট ফুলে থাকে, তখন মা–বাবাকে অবশ্যই বুঝতে হবে শিশু কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছে।
পুষ্টিহীনতা প্রতিরোধে যা করবেন
১) পরিবারের সবাইকে স্বাস্থ্যগত ও পুষ্টিগত জ্ঞান বাড়াতে হবে।
২) শিশুর পুষ্টিহীনতার সঠিক কারণ বের করে তার চিকিৎসা করতে হবে।
৩) শিশুর জন্মের পর থেকে ৫ মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
৪) শিশুকে সময় মতো সব টিকা দিলে স্বাস্থ্যের সুরক্ষা বৃদ্ধি পাবে।
৫) শিশুর ছয় মাস বয়স থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি পাতলা সবজি খিচুড়ি, ডিমের কুসুম ও সেমি সলিড খাবার শুরু করতে হবে।
৬) শিশুকে খাওয়ানোর সময় ভালোবাসা ও যত্ন নিয়ে খাওয়াতে হবে।
শিশুদের খাদ্যতালিকায় আঁশজাতীয় খাবার রাখুন। এতে মল নরম হয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ হয়। কচুশাক, মিষ্টি আলুর শাক, কলমিশাক, পুদিনাপাতা, পুঁইশাক, মুলাশাক, ডাঁটাশাক, লাউ ও মিষ্টিকুমড়া ইত্যাদিতে প্রচুর আঁশ রয়েছে।
বেশি জল খেলে মলাশয় পরিষ্কার হয় এবং শরীর নতুন করে খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে সহজে। তাই প্রতিদিন শিশুকে বেশি করে জল খাওয়াতে হবে। শিশু জল খেতে না চাইলে শরবত, তাজা ফলের রস বা স্যুপ খাওয়ানো যেতে পারে। অনেক শিশুরই ফাস্ট ফুড এবং মাংসজাতীয় খাবার খুবই প্রিয়। কোষ্ঠকাঠিন্য রোধের জন্য শিশুকে এই ধরনের খাবার কম দেওয়া উচিত। আপনার শিশু আপনার ভবিষ্যৎ, তাই শিশুর প্রতিপালনে মা–বাবার সচেতনতা খুবই জরুরি।।
Tags – Baby Food Nutrition To The Child