২ থেকে ৩ বছর বয়সী শিশুর খাদ্য তালিকা নিচে দাওয়া হলো – Below Is The Food List For 2 To 3 Year Old Baby
সব মায়েরা চায় তার শিশুকে দিনভর পুষ্টিযুক্ত খাবার দিতে। কিন্তু আপনার ছোট্টো খুদে কে খাওয়ানো খুবই কস্টকর হয়ে ওঠে কারণ এই বয়সের বাচ্চারা অনেক কিছুই সহজে খেতে চায়না। খাওয়ার চেয়ে খেলাধুলোতে মন বেশী। এই সময় বুদ্ধির বিকাশ খুব দ্রুত হতে থাকে। বুদ্ধির সাথে সাথে শারীরিক বিকাশও বৃদ্ধি প্রায়। এখন আপনার বেবির ওজন তার জন্মের ওজনের প্রায় ৪ গুন বৃদ্ধি পায়। তাই বুদ্ধির সঠিক বিকাশের জন্য সব ধরনের পুষ্টিযুক্ত ও বিভিন্ন ভ্যারাইটির খাওয়ার খাওয়ানোর প্রয়োজন।
২ থেকে ৩ বছর বয়সী শিশুর খাদ্য
শিশুর পাকস্থলী হয় খুবই ছোটো,তাই একসাথে অনেকটা খাওয়াবেন না। শিশুরা এই সময় সারাদিন খেলাধুলো ,দৌড়োনো এই সব নিয়েই ব্যাস্ত থাকে,ফলে তার প্রয়োজন হয় হাই এনার্জি।
অনেক বাচ্চারা এই সময় বাইরের প্যাকেট জাত খাবার খেতে শুরু করে। চিপস ,চকোলেট ,আইসক্রিম এই জাতিয় খাবারগুলো মুখোরোচক উচ্চ নুন,চিনি ও ফ্যাট (সোডিয়াম ,সুগার ও ফ্যাট) যুক্ত হয়, যা বাচ্চার স্বাভাবিক ক্ষুদা নষ্ট করে দেয় ,ফলে বাচ্চারা সাধারণ বাড়ির খাবার আর খেতে চায়না। তাই এই সব খাবার বাচ্চা কে দেবেন না।
মায়েরা ছোটো বাচ্চা নিয়ে সংসার সামলে ,অফিস সামলে বাচ্চার জন্য আবার আলাদা করে রান্না করতে হিমশিম খেয়ে ওঠেন। তাই রান্না করার সময় একটু প্ল্যান করে রান্না করুন। এমন ভাবে রান্না করুন যেটা আপনি ও আপনার বাচ্চা দুজনেই খেতে পারবেন।
শিশুর খাদ্য যেমন হবে ২ – ৩ বয়সে
যেমন ধরুন দুপুরে ভাতের সাথে মাছের ঝোল করেছেন। বাচ্চার জন্য ঝোলে কিছু সবজি যেমন গাজর ,মিষ্টি আলু ,বা একটু ফুলকপি দিন।
বাচ্চাকে বাড়িতে তৈরী সব ধরনের খাওয়ার খাওয়ান।বিভিন্ন রঙের, সাইজের ,আকারের ও গঠনের খাবার দিন। খাওয়ার গুলো দেয়ার সময় তার রঙ বা সাইজ কেমন সেটাও শেখাতে পারেন।
পরিবারের সবাই মিলে একসাথে খেতে বসুন। বাচ্চা এতে পরিবারে সাথে খাবার এনজয় করে খেতে শিখবে, টেবিল ম্যানার শিখবে।
বাচ্চাকে রান্নায় মাঝে সাঝে ইনভল্ভ করুন। সবজির সংখ্যা গুনতে দিন ,বা সবজির রঙ চিনিয়ে দিন বা সবজির নাম শিখিয়ে দিন। বা টেবিল থেকে ছোটো বাটি বা গ্লাস আপনার হাতে দিতে বলুন। এতে বাচ্চার দরকারী মোটোর স্কিল ও সেন্স বৃন্ধি পাৰে।
প্রোটিন ,মিনারেলস ও ক্যালশিয়াম দ্বারা ভরপুর দুগ্দ্ধ জাতীয় খাদ্য যেমন গরুর দুধ ,দই ,ঘী ,চিজ ইত্যাদি বাচ্চার হাড় ও দাঁত গঠন করতে ও মজবুত রাখতে সাহায্য করে ।
মাছ
মাছ প্রোটিন ও ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড বাচ্চার বুদ্ধির বিকাশে,চোখের গঠনে, ইমিউন সিস্টেম গঠন ও মজবুত রাখতে ভীষণ ভাবে জরুরী।
ডিম
বেশিরভাগ বাচ্চারা ডিম খেতে খুব ভালোইবাসে। বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলস যুক্ত ডিম আপনার বাচ্চার পুষ্টির অনেকভাগ যোগান দিতে পারে।একটি ডিমে মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ১৩ টি ভিটামিন ও সামান্য পরিমানে হলেও সমস্ত মিনারেলসই পাওয়া যায়। ডিমের মধ্যে থাকা এতো সব গুনাগুন আপনার বাচ্চার বুদ্ধির বিকাশে ,লিভার কে সুষ্ঠ রাখতে ,পরিপাকতন্ত্র গঠনে ও মজবুত করতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে ।
চিকেন
মাছ ও ডিমের মত চিকেনও প্রোটিনের একটি গুরুত্ব পূর্ন উৎস। চিকেনে বিভিন্ন পুষ্টিকর পদার্থ যেমন আয়রন ,জিঙ্ক ,সেলেনিয়াম ,কোলিন ,ভিটামিনA ও ভিটামিনB12 ইত্যাদি রয়েছে।
হলুদ সবজি
হলুদ সবজি যেমন গাজর ,কুমড়ো ইত্যাদি বাচ্চার প্রতিদিনের ডায়েটে রাখুন। এই সব হলুদ সবজি উচ্চ ভিটামিনA যুক্ত হয় যা বাচ্চার ইমিউন সিস্টেম ভালো রাখে এবং চোখের দৃষ্টি গঠন ও বজায় রাখতে সাহায্য করে।
হেলদি অয়েল
আমরা বাঙালিরা সর্ষের তেলেই সবকিছু রান্না করতে ভালোবাসি। সর্ষের তেলের পাশাপাশি অন্যান্য হেলদি অয়েল যেমন অলিভ অয়েল , অ্যাভোকাডো অয়েল , যোগ করতে পারেন।
সিডস এন্ড নাটস
সিড্স যেমন কুমড়োর বীজ ,চিয়া সিড ,ফ্ল্যাক্সসিড ইত্যাদি এবং বাদাম যেমন কাজু ,আলমন্ড ,আখরোট ইত্যাদি বাচ্চার রোজকার ডায়েট চার্টে(3 years baby food chat in bengali) যোগ করে নিন।
ডালের মধ্যে মুগ ডাল, মুসুরির ডাল বাচ্চাকে খাওয়ান। সবজির মধ্যে মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়ো, আলু, গাজর, মটরশুঁটি, ফুলকপি, ব্রকলি, কুমড়ো, পালংশাক, পুঁইশাক ইত্যাদি সব সবজি খাবে বাচ্চা। ডিম, মাছ ও মুরগির মাংসের নানা পদ নিয়মিত থাকুক ওর খাদ্যতালিকায়।
গাজর ভিটামিন A এর একটি সমৃদ্ধ উৎস হিসেবে পরিচিত।পালং শাক,পাতাকপি এবং অন্যান্য আরও বেশ কিছু সবজির মধ্যেও ভিটামিন A থাকে।আপনার শিশুর খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্যগুলি অন্তর্ভূক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।ভিটামিন A হাড়ের বিকাশে সহায়তা করে।
ব্রকোলি, শিম, গাজর, পালং, মিষ্টি আলু, বিন্স, টমেটো, শাক ইত্যাদি থেকে ফসফরাস, জিঙ্ক, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফলিক এসিড ও এন্টিঅক্সিডেন্ট এ পরিপূর্ণ। বাড়ন্ত বাচ্চার সব চাহিদা সব্জিই উত্তমভাবে পূরণে সক্ষম।
খাবার খাওয়ানোর সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন:
ফাস্টফুড ও কোল্ডড্রিংক জাতীয় জিনিস যতটা দেরি করে খাওয়ানো যায় সেটা দেখুন। জেদ করলেই শুনবেন না। টাটকা খাবার বেশি করে দিন।
খাবার সময় বাচ্চার গ্লুটেন বা ল্যাকটজ জাতীয় খাবারে এলার্জি হচ্ছে কিনা সেটা পর্যবেক্ষণ করুন ও সেই মতো সংশ্লিষ্ট খাদ্যে বদল আনুন।
জোর করবেন না ও ধৈর্য রাখুন। খাবার সময় টিভি বা ফোনে ভিডিও চালিয়ে খাওয়াবেন না।
Tags – Food List For 2 To 3 Year Old Baby