বেশি ঘুমালে কি ওজন বাড়ে – Does More Sleep Increase Weight?
ঘুমের সঙ্গে ওজন বাড়ার সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে শারীরিক শ্রমের। অলস, কর্মহীন ও কায়িক শ্রমহীন ব্যক্তির ওজন বাড়ারই কথা।
ভাতঘুম কি ওজন বাড়িয়ে দিচ্ছে
ঘুমাতে ভালোবাসেন তো সবাই। কিন্তু অনেকেই মনে করেন বেশি ঘুমালে ভুঁড়ি বাড়ে, আবার কেউ কেউ বলেন শরীরে মেদ জমলে বেশি বেশি ঘুম পায়।
পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া ডায়াবেটিসের মতো অসুখেরও একটা বড় কারণ।
সমস্যাটা হলো দৈনন্দিন কাজে শ্রমের ও খাদ্য গ্রহণের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার মধ্যে। তাই ওজন বৃদ্ধির জন্য নিজের খাদ্যাভ্যাস ও শ্রমের দিকে নজর দিন, খুঁজে পাবেন গোলমালটা কোথায়। আর রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের পরও দিনে অতিরিক্ত ঘুম পাওয়া থাইরয়েড হরমোনের সমস্যার কারণে হতে পারে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মানব জীবনে ঘুম হচ্ছে অমূল্য সম্পদ ।
প্রাথমিকভাবে বলা যায়, যাদের ওজন বেশি তারা সব সময়ই ক্লান্ত বোধ করেন। সহজভাবে বলা যায়, চর্বিকোষ, বিশেষ করে পেটের দিকে, এক ধরনের জিনিস তৈরি করে যাকে বলা হয় কাইটোকিনস। এটি ঘুমভাব তৈরি করে এবং ঘুমকে প্রভাবিত করে।
দিনে বেশি ঘুমালে কি ওজন বাড়ে
আরেকটি স্বাস্থ্যবিষয়ক জার্নাল ওয়েব এমডি জানিয়েছে, যাঁরা দিনের বেলা ঘুমান বা নিদ্রালু থাকেন, তাঁরা অন্যদের তুলনায় তিন ভাগ বেশি বিষণ্ণতা রোগে আক্রান্ত হন এবং ওজন যাঁদের বেশি এ সমস্যার কারণে তাঁরা স্লিপ এপিনিয়ার সমস্যায় ভোগেন।
গবেষকরা দেখেছেন, এসব মানুষ হয়তো রাতে ঘুমাতে পারেন না বা মাঝরাতে কোনো কারণে জেগে যান। যার ফলে দিনের বেলায় নিদ্রাভাব হয়। যাঁরা সারা দিন এমন ক্লান্ত বোধ করেন তাদের কর্মক্ষমতা কমে যায়, কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়েন ।
গবেষকরা বলছেন, আপনার হঠাৎ মোটা হয়ে যাওয়া বা বেশি খাবার খাওয়ার পিছনে দায়ী আপনার কম ঘুম। এখনকার ব্যস্ত জীবনের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা ঠিকমতো ঘুমনোর সময়ই পান না। আবার অনেকে আছেন যারা বিছানায় শুয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুক বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে কাটিয়ে দেন। এই সব কিছুর মাঝে পরে ঘুম আপনার জীবন থেকে প্রায় বিদায় নিতে বসেছে।
প্রতিদিন কোনও পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি যদি অন্ততপক্ষে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা না ঘুমান, তবে তাঁর শরীরে নানা রকমের রোগ বাসা বাঁধতে পারে। আর সেই রোগ থেকেই জন্ম নেয় বিষণ্ণতা।
বিষণ্ণতায় মানুষ সাধারণত চকোলেট, চিপস বা অন্যান্য ভাজাভুজি জাতীয় খাবার বেশি খেতে শুরু করে। যারফলে আস্তে আস্তে তার মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতাও তৈরি হতে পারে।তাই আজই এই সমস্ত জটিলতা এড়িয়ে যেতে সময় মতো ঘুমানো অভ্যাস করুন। প্রয়োজন হলে ঘুমানোর কিছুক্ষণ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন।
আর তারপরও ঘুম না এলে ঘর অন্ধকার করে চুপচাপ বেশ কিছুক্ষণ শুয়ে থাকুন। তাতে আসতে আসতে আপনার মাথা থেকে গোটা দিনের যাবতীয় চিন্তা দূর হয়ে যেতে শুরু করবে। আর কিছুক্ষণ বাদে ঘুম এলে সেই ঘুমটাও গভীর ঘুম হবে।
অতিরিক্ত ঘুম হরমোনের উপরও প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনগুলো এর দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। বেশি ক্লান্ত বোধ করার কারণে শরীরে খুব কম শক্তি থাকে, যার কারণে মানুষ সাধারণত জাঙ্ক ফুড বা উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া শুরু করে। এই সব কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। যার ফলে ডায়েবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সেরোটোনিন হরমোনের সাহায্যে ঘুম নিয়ন্ত্রিত হয়। অতিরিক্ত ঘুম সেরোটোনিনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, নিউরোট্রান্সমিটারকেও বাধা দেয়, সেজন্য অনেকেই সকালে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার পরে মাথাব্যথার অভিযোগ করেন। এছাড়া দীর্ঘ সময় ঘুমানোর পর হঠাৎ ক্ষুধা এবং তীব্র তৃষ্ণা বোধ হয়, যার কারণে মাথাব্যথা শুরু হয়।
অতিরিক্ত ঘুম ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে। স্লিপিং সাইকেল নষ্ট হয়ে গেলে উৎকণ্ঠা এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
বেশি ঘুমানোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে হতে পারে ক্লান্তি। অত্যধিক ঘুমে দেহঘড়ির স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। অতিরিক্ত বিশ্রামের কারণে পেশী এবং স্নায়ু শক্ত হয়ে যায়। ফলে শারীরিক চাপ নিতে সমস্যা হয়।