পেঁপের গুন ও উপকারীতা – Properties And Benefits Of Papaya
পেঁপে একটি সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী ফল। পুষ্টিগুন বিবেচনায় পেঁপে অনান্য ফলের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। তাই পেঁপের আরেক নাম পাওয়ার ফ্রুট কারণ, এতে রয়েছে অনেক রোগের নিরাময় ক্ষমতা। পেঁপে কাঁচা ও পাকা দুই ভাবেই খাওয়া যায়। কাঁচা পেঁপে সালাদে ও রান্নায় এবং পাকা পেঁপে ফল হিসেবে খাওয়া যায়। এই পেঁপে পরিপাক তন্ত্রকে পরিষ্কার করে। এই ফলের পুষ্টিগুণ যেমন প্রচুর, তেমনি শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ফলটি খুবই কার্যকর। হৃদযন্ত্র ভালো রাখা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করা, হজমের সমস্যা দূর করা সহ অনেকগুলো শারীরিক উপকারিতা করে পেঁপে। এই ফলের ১০০ গ্রামে ৩৯ ক্যালরি থাকে। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, আঁশ, ভিটামিন এ,বি,সি,ডি আছে পেঁপেতে। এছাড়া পটাশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম ও অ্যালবুমিন এনজাইম থাকে পেঁপেতে।
কাঁচা পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা
বিশ্বজুড়ে কসমেটিকস তৈরিতেও পেঁপে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ফল লিভার ও ব্লাড সুগার স্বাভাবিক রাখে, অন্ত্রের ক্ষতিকর উপাদান দূর করে। পেঁপে খেলে শরীর সতেজ হয় ও জীবনী শক্তি ফিরে পাওয়া যায়। পাকস্থলীর অতিরিক্তি এসিড দূর করে, তাই যারা গ্যাস্ট্রিক ও বুক জ্বালায় ভুগছেন, তাদের জন্য পেঁপে খুব উপকারি।
জাপানে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁপে খেলে এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, পেঁপে গাছের মূল ও ফুল কিডনি রোগ, ব্রংকাইটিস ও জন্ডিস সারায়। কাইমোপ্যাপিন নামের এনজাইম থাকায় পেঁপে ওসটিওআথ্রাইটিস ও রিউমেটয়েড রোগ সারায়।
পেঁপের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ
নারীদের রজঃস্রাব সমস্যায় : যেসব নারীর অনিয়মিত রজঃস্রাব হয়, তাদের জন্য পেঁপের জুস উপকারি। এক্ষেত্রে কাঁচা বা পাকা পেঁপে খেলেও উপকার পাওয়া যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে : পেঁপেতে প্রচুর ভিটামিন ই, সি ও ফলেট থাকায় মল ত্যাগে সমস্যা বা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এই ফল।
কাঁচা পেঁপে ও তার জুস হজমে সহায়তা করে। পেঁপেতে থাকা আঁশ বাওয়েল মুভমেন্ট স্বাভাবিক রাখে। এতে করে মল ত্যাগের সমস্যা দূর হয়।
পাকা পেঁপে খাওয়ার সঠিক সময়
এই ফলে থাকা বিটা ক্যারোটিন নামের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। শরীরের যন্ত্রণা সারায় :
ব্রণ সারায় পেঁপে : বয়োঃসন্ধিকালে বা মুখমণ্ডলে ময়লা জমার কারণে যে ব্রণ সৃষ্টি হয়, তা দূর করতে নিয়মিত পেঁপে খেলে আপনার ত্বক পরিষ্কার হবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি ও ই আছে। এই ভিটামিন গুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে।
ত্বকের যত্নে কাচা পেঁপে
হজমশক্তি বাড়ায়ঃ পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম আছে যা খাবার হজমে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও প্রচুর পানি ও দ্রবণীয় ফাইবার আছে। যারা হজমের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাঁরা নিয়মিত পাকা বা কাঁচা পেঁপে খেতে পারেন।
ওজন কমায়ঃ প্রাকৃতিকভাবে আমাদের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে পেঁপে। পেঁপেতে ক্যালোরির পরিমাণ খুব কম থাকে এবং উপকারী ফাইবার বা আঁশ বেশি থাকে বলে যারা ওজন সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা পেপে খেতে পারেন নিয়মিত।
কোলেস্টেরল কমায়ঃ পেঁপেতে কোনো কোলেস্টেরল নেই। আর পেঁপেতে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা ধমনীতে কোলেস্টেরল জমতে বাঁধা প্রদান করে।
ত্বকের জন্য উপকারীঃ ত্বকের জন্য পেঁপে অনেক উপকারী। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে, একজিমা রোধ করতে, এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে পেঁপে খুবই উপকারী।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যারোটিনের উৎসঃ পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন, ফ্লেভানয়েড, লুটেইন, ক্রিপ্টোক্সান্থিন আছে যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
পাকা পেপের উপকারিতা
হাড় মজবুত করেঃ পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং কপার রয়েছে, নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালসিয়াম তৈরি হয় যা হাড় মজবুত করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধকঃ পেঁপে ক্যান্সার নিরাময়েও ভূমিকা রাখে, পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভোনোক্সিড যা দেহে ক্যান্সারের কোষ তৈরিতে বাঁধা দেয়।
এছাড়া পেঁপের ভেতরের অংশসহ মাস্ক হিসেবে এটি মুখে ব্যবহার করলে ব্রণ দূর হয়।